ফ্রিল্যান্সিং কথাটির সাথে আমরা সকলেই কম বেশি পরিচিত। ফ্রিল্যান্সিং হলো স্বাধীন বা মুক্তপেশা। কোনো কম্পানির অধীনে কাজ না করে মুক্ত ভাবে কাজ করাকে ফ্রিল্যান্সিং বলে।
একজন ফ্রিল্যান্সার চাইলেই তার পছন্দ মতো সময়ে কাজ করতে পারে এমনকি তারা তাদের এই কাজ গুলো নিজের ঘরে বসে থেকেই করে থাকে। প্রচলিত চাকরির থেকে ফ্রিল্যান্সিং এ বেশি টাকা আয় করা যায় এটি একটি মুক্ত পেশা দেখে অনেকেই ফ্রিল্যান্সিংকে নিজের একমাত্র পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে।
আজ আমরা এই ফ্রিল্যান্সিং কি? কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শিখবো? কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং করতে হয়? ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলবো। আশা করি সম্পূর্ণ লেখাটি পড়বেন।
বর্তমানে সারা বিশ্বের এমনকি আমাদের বাংলাদেশের অনেক তরুণ-তরুণী ফ্রিল্যান্সিং কে পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছে। যেহেতু ফ্রিল্যান্সিং একটু মুক্তপেশা তাই এত ঝামেলা পোহিয়ে চাকরি করতে যাবে কে। বিশ্বের কথা না হয় বাদই দিলাম বর্তমানে বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিং ভালো এক অবস্থানে রয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের চাকরির বাজারের অবস্থা খুবই খারাপ থাকা এবং এই করোনা কালীন সময়ে মানুষ প্রচলিত চাকরির চেয়ে ফ্রিল্যান্সিংকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।
বাংলাদেশে মানুষের কাছে ফ্রিল্যান্সিং বিষয়টা তেমন ভালো দিক নয়। প্রায় সকলেই চান তাদের সন্তান সরকারি চাকরি করুক বা কোনো কম্পানির বড় একটি পোস্টে চাকরি। সাধারনত তাদের সন্তান সারা দিন কম্পিউটার এর সামনে বসে ফ্রিল্যান্সিং করবে এটা কেউ মেনে নিতে পারে না। আবার আমাদের মাঝেও ফ্রিল্যান্সিং অনেক ভুল ধারণা আছে যার সুযোগ নিয়ে অনেক বাটপাররা ভুয়া কোচিং সেন্টার খুলে ফ্রিল্যান্সিং শিখানোর নামে অনেক টাকা মেরে নিয়ে যাচ্ছে।
হয়তো আপনি অনেক দিন ধরেই ফ্রিল্যান্সিং কি বা কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং করতে হয় বা ফ্রিল্যান্সিং করে টাকা আয় এসব ব্যাপারে শুনে আসছেন হয়তো নিজে কয়েকবার গুগল মামার কাছে এসে সার্চও করেছেন এই বিষয়ে। আপনি হয়তো ফ্রিল্যান্সিং এর মৌলিক বিষয় গুলো জেনেগেছেন। আজ আমি ফ্রিল্যান্সিং এর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আলোচনা করবো আপনাদের কাছে। আশা করি সম্পূর্ণ লেখাটি পড়বেন।
ফ্রিল্যান্সিং কি? (What Is Freelancing?)
আমি প্রথমেই বলেছি ফ্রিল্যান্সিং হলো একটি মুক্তপেশা। সাধারনত একটি প্রচলিত চাকরির মতোই। আপনি ক্লায়েন্ট এর থেকে আপনার যোগ্যতা দেখিয়ে কাজ নিবেন এবং সেই কাজ শেষ করে তাকে বুঝিয়ে দিলেই আপনি টাকা পাবেন।
সহজ ভাষায় বলতেঃ ধরুন আপনি অনার্স বা মাস্টার্স শেষ করে কোনো এক কম্পানিতে গিয়েছেন চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিতে। যারা ইন্টারভিউ বোর্ডে থাকবে তারা আপনার শিক্ষাগত যোগত্য,,আপনার পারসোনালিটি সহ বিভিন্ন কিছু দেখে তাদের যদি মনে হয় আপনি সেই পদের জন্য যোগ্য তাহলে তারা আপনাকে চাকরি টি দিবে এবং আপনি মাস শেষে বেতন নিতে পারেন।
ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রেও ঠিক একই প্রক্রিয়া চলে। আপনাকে প্রথমে কোনো একটি অনলাইন মার্কেটপ্লেস যেমনঃ ফাইভার,আপওয়ার্ক ইত্যাদি সাইটে গিয়ে নিজের একটি সুন্দর প্রোফাইল তৈরি করে নিতে হবে। তারপর আপনাকে চাকরিট ইন্টারভিউ এর মতো ক্লায়েন্ট দের জব প্রোপোজাল বা গিগ পাবলিশ করতে হবে। ক্লায়েন্ট যদি দেখে আপনি কাজটি করতে পারবেন তাহলে সে আপনাকে কাজ দিবে এবং সেই কাজটি করে জমা দিলে আপনি আপনার টাকা পাবেন।
অনলাইনে ক্লায়েন্টের থেকে কাজ নিয়ে তা অনলাইনেই জমা দিয়ে টাকা আয় করাই হলো মূলত ফ্রিল্যান্সিং। যারা ফ্রিল্যান্সিং করে তাদেরকে ফ্রিল্যান্সার বলা হয়।
এগুলোও দেখতে পারেন:
- টাকা আয় করার apps 2023 – মোবাইল দিয়ে কাজ 100% পেমেন্ট করে
- ৪২টি সেরা ফ্রিল্যান্সিং সাইট ২০২৩ – Freelancing Sites list 2023
ফ্রিল্যান্সিং এর সুবিধা কি? (What are the benefits of freelancing?)
ফ্রিল্যান্সিং এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এর কাজের স্থান। এখানে কাজ করতে আপনার কোনো অফিসের প্রয়োজন পড়ে না। আপনি আপনার ঘর থেকেই কাজ করতে পারবেন এবং নিজের পরিবারকে আরো বেশি সময় দিতে পারবেন। ফ্রিল্যান্সিং এর আরো একটি সুবিধা হলো আপনার কোনো বস থাকবে না, আপনি নিজেই আপনার বস। আপনার মন মতো সময়ে কাজ করতে পারবেন।
যখন ভালো লাগবে তখন কাজ করবেন আবার যখন ভালো লাগবে না তখন কাজ না করলেও বলার মতো কেউ থাকবে না। এখানে নেই কোনো প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার চাপ, নেই কোনো গাড়ির জামে পড়ার চিন্তা। আপনাকে প্রচলিত চাকরির মতো সময় করে প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত কাজ করতে হবে না।
আপনি ইচ্ছা মতো যেকোনো সময় যেকোনো স্থানে কাজ করতে পারবেন।
নোটঃ ফ্রিল্যান্সিং একটি মুক্ত পেশা হলেও আপনি যদি এই সেক্টরে সফল হতে চান বা ভালো কিছু করতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই নিয়ম মেনেই কাজ করতে হবে। দিনরাত জেগে আপনাকে কাজ শিখতে হবে এবং তা প্রয়োগ করতে হবে।
পরিশ্রম ছাড়া কিছুই হয়না। আপনি যদি ভেবে থাকেন যে আজকে মার্কেট প্লেসে প্রোফাইল খুলে কাজই কাজ পেয়ে হাজার হাজার টাকা কামাবেন তাহলে ফ্রিল্যান্স আপনার জন্য না। এখানে ১/২ দিনে কিছুই হয়না। আপনাকে কম করে হলেও ৬ মাস থেকে ১ বছর সময় দিয়ে কাজ শিখতে হবে তারপর কিছু করে আয় করার চিন্তা করতে হবে।
শুধু ফ্রিল্যান্সিং নয় আপনি কি চাইলেই কোনো কম্পানিতে চাকরি করতে পারবেন?
আপনাকে আগে ক্লাশ ওয়ান থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন ক্লাশ টেন এবং ভালো কিছু করতে চাইলে আরো অনেক পড়ে তারপর চাকরির চিন্তা করতে হবে আর ফ্রিল্যান্সিং একই। আগে কাজ শিখতে হবে তারপর সব হবে।
ফ্রিল্যান্সিং এর অসুবিধা কি কি? (What are the disadvantages of freelancing?)
সবকিছুরই একটি ভালো ও একটি ভালো খারাপ দিক থাকে। ঠিক তেমনি ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রেও কিছু অসুবিধা আছে যেমনঃ এখানে আপনাকে আগে ভালো ভাবে কাজ শিখে আসতে হবে।
কারণ আপনি যদি কাজ না শিখেই ক্লায়েন্ট দের সাথে কথা বলা শুরু করেন তাহলে না পাবেন না কারন আপনার মুখ দেখে আপনাকে কেউ কাজ দিবে না। এক্ষেত্রে আপনার হতাশ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং তারপর আর্থিক অনটনে পড়তে পারেন।
এখানে আর একটি অসুবিধা হলো এখানে কাজের কোনো নিশ্চয়তা নেই। আপনি হয়ত কোনো মাসে অনেক কাজ পাবেন আবার হয়ত কোনো মাসে একটা কাজও পাবেন না।
শুরুর দিকে আপনার কাজ পেতে কিছুটা সমস্যা হবে তবে আপনি ধর্য্য ধরে থাকতে পারলে ভালো কিছু করতে পারবেন।
এখানে ক্লায়েন্টদের সাথে আপনি সরাসরি কথা বলতে পারবেন না।
আপনি কাজ ভালো ভাবে করে জমা দিতে পারলে টাকা পাবেন না হলে টাকা পাবেন না।
আগে বাংলাদেশিদের পেমেন্ট পেতে সমস্যা হতো তবে ২০২২ সালে বাংলাদেশ সরকার একটি পদ্ধতি চালু করেছে যার মাধ্যমে পেওনার থেকে সরাসরি বিকাশে টাকা আনা যায়। এর মাধ্যমে বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সাররা অনেক সহজেই টাকা তুলতে পারছে।
ফ্রিল্যান্সিং কি হালাল নাকি হারাম?
শুনতে হাস্যকর হলেও কিছু কিছু মানুষ প্রশ্ন করে যে ফ্রিল্যান্সিং করা কি হালাল নাকি হারাম। আসলে এটা হারাম নাকি হালার সেটা সম্পূর্ণ যে কাজ করবে তার উপর নির্ভর করে। ফ্রিল্যান্সিং এ কিছু এডাল্ট কাজও আছে। আপনি যদি সেই কাজগুলো করেন তাহলে সেটা হারাম হবে তবে আপনি যদি লগো / গ্রাফিক্স ডিজাইন,,ওয়েব ডিজাইন / ডেভোলপমেন্ট,,এসইও,,রাইটিং সহ এমন ভালো ভালো কাজ গুলো করেন তাহলে সেটা হালাল হবে।
ফ্রিল্যান্সিং কেন করবো? (Why do freelancing?)
বর্তমানে বাংলাদেশের চাকরির বাজারের যে অবস্থা চাকরি নেই বললেই চলে। সব মিলে ২ কোটি পদ থাকলে প্রতিবছর পাশ করে বের হয় ১০ কোটি শিক্ষার্থী। তাহলে ২ কোটি পদে ১০ কোটি মানুষ কে কি করে চাকরি দিবে!!!!
এজন্য অনেকেই বিসিএস দিয়েও বেকার হয়ে বসে থাকে। তবে আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিং এ কোনো একটি বিষয়ের উপর নিজের দক্ষতা তৈরি করে নিতে পারেন তাহলে আপনার আর বেকার হয়ে বসে থাকতে হবে না। আপনি তা থেকে সারা জীবন কাজ করে টাকা আয় করতে পারবেন। এজন্যই আমাদের চাকরির প্রতি না ঝুঁকে ফ্রিল্যান্সিং করা উচিত।
ফ্রিল্যান্সারা কিভাবে কাজ পায়?
ধরুন আপনি একজন ডাক্তার আর আপনি একজন ফ্রিল্যান্সার যার ফাইভারে একটি ভালো মানের প্রোফাইল আছে।
মনে করুন আমি একটি নতুন ক্লিনিক খুললাম যেটার কথা কেউ ঐভাবে জানে না তাই আমি চাচ্ছি একটি ওয়েবসাইট তৈরি করবো যার মাধ্যমে সবাই আমার ক্লিনিক এর কথা জানতে হবে।
একটি ওয়েবসাইট বানতে লগো লাগবে, এসইও করা লাগবে, এবং সাইটটা সুন্দর করে সাজাতে হবে। আমি তো এত কিছু পারি না তবে আমি জানি যে ফাইভারে গেলে অনেক ভালো ভালো লগো ডিজাইনার,,ওয়েব ডিজাইনার এবং এসইও এক্সপার্ট পাবো।
তাই আমিও ফাইভারে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করে তাতে এসব কাজের জন্য গিগ পাবলিশ করলাম এবং আপনি এসে আমাকে প্রপোজাল দিলেন যে আপনি কাজ গুলো পারবেন।
তারপর আমি আপনার আগের কাজ গুলো দেখে বুঝলাম যে আপনি কাজগুলো করতে পারবেন তাই কাজটি আপনাকে দিলাম এবং কাজটি শেষ করার পর আপনি আপনার পাওনা টাকা পেয়ে গেলেন।
আমি এখানে উদাহরণ দিয়ে বললাম তবে ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে একজন ক্লায়েন্ট এভাবেই কাজ দিয়ে থাকে এবং একজন ফ্রিল্যান্সার এভাবেই কাজ পেয়ে থাকে।
ফ্রিল্যান্সিং করে কত টাকা আয় করা যায়?
ফ্রিল্যান্সিং করে কত টাকা আয় করতে পারবেন এটা সম্পূর্ণ আপনার যোগ্যতার উপর নির্ভর করে। আপনি যদি ভালো কাজ পারেন তাহলে আপনি মাসে কয়েক লক্ষ টাকাও আয় করতে পারবেন তবে নতুন অবস্থায় আপনি ১৫-২০ হাজার টাকা আয় করতে পারবেন তবে এই পরিমান টাও হলো সর্বোচ্চ।। আপনার অভিজ্ঞতা যত বাড়বে আপনার আয়ের পরিমান ও তত বাড়তে থাকবে।
আপনার কাজের দক্ষতা,অভিজ্ঞতা এবং নিপুণতা যত বাড়বে আপনি আপনার কাজের জন্য তত বেশি টাকা চার্জ করতে পারবেন। বাংলাদেশে অনেক ভালো ভালো ফ্রিল্যান্সার আছে যারা প্রতি মাসে ৩/৪ লক্ষ টাকা অনায়াসেই আয় করছে নিজের ঘরে বসে থেকেই।
প্রথম দিকে আপনি যখন কাজ পেতে শুরু করবেন তখন চেষ্টা করবেন যাতে যতটা পারা যায় কম চার্জ করার কিন্তু কমাতে কমাতে এতই কম করবেন না যাতে আপনার লস হয়ে যায়।
ক্লায়েন্টদেরর সাথে ভালে ব্যবহার করবেব এবং সময় মতো কাজ বুঝিয়ে দিবেন তাহলে আজ একটি ক্লায়েন্ট এর থেকে।যে কাজের জন্য ৫ ডলার নিতে পারবেন কয়েক দিন পর হয়ত একই ক্লায়েন্ট এর থেকে একই কাজের জন্য ২০ ডলার নিতে পারবেন। তাই আপনার উচিত হবে ধর্য্য ধরে কাজ করা।
ফ্রিল্যান্সিং এ ভারতেই পরেই বাংলাদেশের স্থান। বাংলাদেশের একজন ফ্রিল্যান্সার এর মাসিক গড় আয় ৫ হাজার টাকার মতো। তবে বাংলাদেশ থেকে ফ্রিল্যান্সিং এ আরো ভালো করার সুযোগ আছে।
সারা পৃথিবীতে যত ফ্রিল্যান্সার আছে তার মধ্যে প্রায় ২৭ শতাংশ ফ্রিল্যান্সার বাংলাদেশি।
বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সারদের মাঝে সেলস এন্ড মার্কেটিং,, ওয়েব ডিজাইন,,ওয়েব ডেভোলপমেন্ট,ভিডিও এডিটিং,, গ্রাফিক্স ডিজাইন ইত্যাদি কাজের প্রতি বেশি আগ্রহ দেখা যায়।
২০১৯ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী ফ্রিল্যান্সিং এ বাংলাদেশের অবস্থান ৮ম তম।
ফ্রিল্যান্সিং করতে কি কি লাগে?
অনেকেই হয়ত ভাবছেন আমি কি ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবো বা আমি কি ফ্রিল্যান্সিং এর যোগ্য! আসলে ফ্রিল্যান্সিং বিষয়টা সবার জন্য নয়।
এর জন্য প্রথমেই আপনার দরকার ইচ্ছা এবং ধর্য্য শক্তি। আপনার যদি সহ্য করার শক্তি বা ধর্য্য ধারণ করার শক্তি না থাকে তাহলে ফ্রিল্যান্সিং পেশা আপনার জন্য নয়। এখানে কাজ করতে আপনার মাঝে অবশ্য অবশ্যই ধর্য্য শক্তি থাকা লাগবে।
এর পর আপনার প্রয়োজন ইংরেজি ভাষা বোঝার এবং কথা বলার দক্ষতা। অনলাইন মার্কেট প্লেস গুলোতে বেশির ভাগ ক্লায়েন্ট হলো বিদেশি যাদের সাথে আপনি বাংলায় কথা বলতে পারবেন না এর জন্য আপনাকে অবশ্যই ইংরেজি ভাষা শিখতে হবে কারণ এটা হলো একটি কমন ভাষা যার মাধ্যমে সকলের সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন।
তারপর আপনার কমিউনিকেশন স্কিল দরকার, আপনার মাঝে থাকতে হবে কাজ শিখার প্রবল ইচ্ছা।
সবশেষে আপনার প্রয়োজন একটি ডিভাইস যেমনঃ পিসি বা ল্যাপটপ অথবা একটি মোবাইল ( মোবাইল দিয়েও আপনি অনলাইনে অনেক গুলো কাজ করে আয় করতে পারবেন। এবিষয়ে আমার একটি আর্টিকেল আছে চাইলে তা পড়ে আসতে পারেন) এবং ভালো একটি ইন্টারনেট কানেকশন।
কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবো? (How To Start Freelancing?)
আপনাদের মাঝে অনেকেই মনে এখন প্রশ্ন আসতে পারে তা হলো কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে হয়?
ফ্রিল্যান্সিং পেশায় প্রবেশ করার আগে আপনাকে অবশ্যই নিদিষ্ট একটি বিষয়ের উপর কাজ শিখতে হবে। এজন্য আপনাকে প্রথমে দেখতে হবে কোনো কাজটি আপনি ভালো পারবেন বা কোন কাজটি বিষয়ে আপনি অনেক কিছু জানেন। যে কাজটি আপনার ভালো লাগে সেই কাজটি নিয়েই ফ্রিল্যান্সিং শুরু করুন কারণ এর এই টি করে আপনি টাকার সাথে মজার পাবেন।
আপনার পছন্দের কাজটি বেছে নিলে আপনি সেই কাজটি করে অনেক দূর যেতে পারবেন। যেমন ধরুন আপনি এসইও কাজটি ভালো পারেন। এজন্য আপনাকে বিভিন্ন রিসোর্স মানেঃ গুগল,ইউটিউব এবং বিভিন্ন ব্লগ পড়ে এসইও বিষয়ে আপনার সকল জ্ঞান অর্জন করতে হবে।
আপনাকে কাজ শুরু লরার আগে প্রথমে ঐ কাজের উপর সকল ধারণা নিয়ে নিতে হবে না হলে পরে কাজ করার সময় সমস্যা হবে। এরপর আপনাে বিভিন্ন অনলাইন মার্কেট প্লেস (যেমনঃ Fivert,,Freelancing,,Upwork,,Peopleperhour ইত্যাদি) গুলোতে গিয়ে এসইও এক্সপার্ট হিসেবে একটি প্রোফাইল তৈরি করতে হবে এবং তা থেকে এসইও বিষয়ক বিভিন্ন গিগ পাবলিশ করতে হবে।
আপনাকে প্রথম প্রথম কাজ পেতে অনেক বেগ পেতে হবে তবে আপনি ভালো কারোর থেকে রেফারেন্স নিয়ে সহজেই কাজ পেতে পারেন তবে এর জন্য আপনাকে সকল ফ্রিল্যান্সার দের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখতে হবে। বাংলাদেশি অনেক ফেসবুক গ্রুপ আছে যেখানে অনেক বড় বড় ফ্রিল্যান্সার আছে তাদের সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরি করুন। এতে আপনার কাজ পেতে সুবিধা হবে এবং কাজের মাঝে কোনো সমস্যায় পড়লে তাদের থেকে পরামর্শ নিয়ে তা সমাধান করতে পারবেন।
নতুনদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং
উদাহরণস্বরুপ বলা যায়ঃ ২০১০ সালে একজন লোক চাইলেই ফ্রিল্যান্সিং করতে পারতো না কারণ সেসময় সকলের কাছে কম্পিউটার বা ভালো কোনো মোবাইলও ছিলো না। তাই কেউ ফ্রিল্যান্সিং করতে চাইলে তাকে অনেক কষ্ট করে টাকা জোগাড় করে কম্পিউটার কিনতে হতো। সেসময় আর একটা সমস্যা ছিলো সেটা হলো ইন্টারনেটের সমস্যা।
তবে এখন কেউ চাইলেই ফ্রিল্যান্সিং পেশার সাথে যুক্ত হতে পারে। সেসময় নিজে নিজেই কাজ শিখতে হতো আর এখন দেশে অনেক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যাদের থেকে আপনি খুব সহজেই সকল কাজ শিখতে পারবেন। তারা কাজ শিখানো থেকে শুরু করে কাজ পাওয়া পর্যন্ত সকল প্রকার সাহায্য করে থাকে।
ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখব? (How To Learn Freelancing?)
আসলে ফ্রিল্যান্সিং এ শিখার মতো কিছু নেই। সহজ ভাষায় বলতেঃ ধরুন আপনি ২০-২৫ বছর পর্যন্ত পড়ালেখা করে অনেক সার্টিফিকেট অর্জন করে একটি চাকরি নিলেন। এখন আপনি যদি আপনাকে প্রশ্ন করি যে আপনি কি চাকরটি করে করে আপনি কাজ শিখতে পারবেন? তাহলে আপনার কাছে ভালো কোনো উত্তর থাকবে না নিজের কাজ করতে করতে শিখা যায় তবে এভাবে অন্যের কাজ করতে করতে শেখা যায় না।
আপনাকে আগে থেকেই কাজ শিখে তারপর চাকরি নিতে হবে। আর একটি কথা হলো আপনি যদি কাজ না পারেন তাহলে আপনার সার্টিফিকেট দেখে কেউ আপনাকে চাকরি দিবে না।
ঠিক একই ভাবে বলা যায় ফ্রিল্যান্সিং বিষয়টা শেখা যায় না। আপনাকে প্রথমে আপনার যে বিষয়ে কাজ করতে ভালো লাগে সে বিষয়টি বিষয়ে সকল কিছু জানতে হবে এবং কাজটি ভালো ভাবে শিখতে হবে তারপর ফ্রিল্যান্সিং জগৎে আসতে হবে।
কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং কে ক্যারিয়ার হিসেবে তৈরি করবো?
আপনি হয়ত ভাবতে পারেন যে ফ্রিল্যান্সিং তো চাকরির মতোই তাহলে আমি কি চাকরি বাদ দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং কেই ক্যারিয়ার হিসেবে তৈরি করে নিতে পারবো?
আমি বলবো যে হ্যাঁ,,আপনি যদি দক্ষতার সাথে কাজ করতে পারেন তাহলে আপনার আর চাকরি করার প্রয়োজন নেই।
ফ্রিল্যান্সিংকে ক্যারিয়ার হিসেবে তৈরির জন্য যে ধাপ গুলো পার করতে হবে তা আমি নিচে ভালো করে সাজিয়ে তুলে ধরার চেষ্টা করবোঃ
১/ ফ্রিল্যান্সিং এ কি কাজ করবেন-
ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনি যদি আপনার মন মত বিষয় নিয়ে কাজ করতে না পারেন তাহলে আপনি কোনো দিন সফল হয়ে পারবেন না। উদাহরণস্বরুপ বলা যায়ঃ
ধরুন একটি সন্তানের স্বপ্ন হলো সে ডাক্তার হবে। কিন্তু তার মা বাবা যদি তাকে জোর করে সেনাবাহিনীতে চাকরি নিয়ে দেয় তাহলে হয়ত ছেলেটি ভালো বেতন এবং মানুষের থেকে সম্মান পাবে কিন্তু সে মনে মনে মৃত হয়ে যাবে। কারণ যে কাজ তার ভালো লাগে না সেই কাজটিই তাকে করতে হচ্ছে।
তেমনি আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিং করতে চান তাহলে প্রথমে আপনার কোন বিষয়টি ভালো লাগে তা ঠিক করতে হবে। ফ্রিল্যান্সিং এ সকল ধরনের কাজ করা যায় যেমনঃ লেখালেখি,,,ছবি তোলা,,ভিডিও এডিটি,,লগো ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইল,,ভার্চয়াল সহকারী,, সহ ইত্যাদি অসংখ্য বিষয় নিয়ে কাজ করা যায়। যে কাজটি আপনার ভালো লাগে সেই কাজের উপর আপনার দক্ষতা তৈরি করে নিতে হবে।
২/ মার্কেটপ্লেসে অ্যাকাউন্ট তৈরি করা-
আপনাকে কাজ শিখার পর বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটপ্লেস গুলোতে গিয়ে অ্যাকাউন্ট তৈরি করে নিতে হবে। আপনি চাইলে লোকাল ক্লায়েন্ট দের কাজও করতে পারবেন তবে মার্কেটপ্লেস গুলোতে কাজ করাই উত্তম।
৩/ নিজের পোস্টফোলিও তৈরি করা-
আপনি কাজ শিখার সময় পরীক্ষা করার জন্য যে কাজ গুলো করেছেন বা আগে আপনি ক্লায়েন্ট দের যে কাজ গুলে করে দিয়েছেন সেগুলোর একটা লিস্ট তৈরি করতে হবে এবং আপনি যে কাজ পারেন এটা যাতে বুঝতে পারেন এমন করে সুন্দর করে সাজিয়ে পোর্টফোলিও তৈরি করে নিতে হবে।
৪/ কাজ খোঁজা এবং বিড করা-
আপনার সকল কাজ শেষ হয়ে গেলে আপনাকে নতুন নতুন কাজ খুঁজতে হবে এবং ক্লায়েন্ট দের প্রোজেক্ট এ বিড করতে হবে।
৫/ কাজের জন্য অপেক্ষা করা-
আপনি যদি প্রথম প্রথম কাজ শুরু করবপন তখন কাজ পেতে কিছুটা সমস্যা হবে তবে ধর্য্য ধরে থাকলে আপনি অবশ্যই কাজ পাবেন।
৬/ কাজ শেষ করা এবং পেমেন্ট নেয়া-
যখন কোনো ক্লায়েন্ট আপনাকে কাজ দিবে তখন সে আপনাকে কয়দিন সময় দিবে। সেই সময়ের মাঝেই আপনাকে কাজটি করে জমা দিতে হবে। ক্লায়েন্ট যদি দেখে কাজটি আপনি ভালো ভাবে শেষ করেছেন তাহলে আপনাকে সে পেমেন্ট দিয়ে দিবে।
৭/ রিভিউ নেয়া-
আপনি যখন কোনো ক্লায়েন্ট এর কাজ শেষ করে তাকে তার কাজটি বুঝিয়ে দিবেন তখন আপনি ক্লায়েন্ট কে বলবেন আপনার প্রোফাইলে সে যেন রেটিং দেয়। এতে আপনার পরবর্তীতে কাজ পেতে সাহায্য করবে।
কোন কোন সাইটে ফ্রিল্যান্সিং করা যায়? (Freelancing Website List)
ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য অনলাইনে অনেক গুলো মার্কেটপ্লেস আছে যারা অনেক দিন যাবৎ তাদের সার্ভিস দিয়ে আসছে। এমন কিছু জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস এর নাম গুলো নিচে দেয়া হলো-
১/ Fiverr-
বর্তমান সময়ে ফাইভার হচ্ছে জনপ্রিয় একটি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস। বাংলাদেশের অধিকাংশ ফ্রিল্যান্সার এখানে কাজ করে থাকে। আপনি এখানে কাজ অনুযায়ী ৫ থেকে কয়েক শত ডলার পর্যন্ত চার্জ করতে পারবেন।
২/ Upwork-
এটিও একটি জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস যেখানে আপনি ঘন্টা প্রতি চার্জ করতে পারবেন। ভালো ভালো ফ্রিল্যান্সাররা ঘন্টা প্রতি ৩০-৫০ ডলার চার্জ করে থাকে। এই প্রতিষ্ঠানটির পূর্বে নাম ছিলো Odesk তবে এটি ২০১৫ সালে Elance নামক একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হয়ে Upwork নাম ধারণ করে।
৩/ Freelancer-
ফ্রিল্যান্সার ডট কম হলে প্রথম সারির ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস গুলোর মধ্যে অন্যতম। আপনি এখানেও কাজ করতে পারবেন।
নোটঃ আরো অনেক সাইট আছে তবে এই তিনটি সাইট হলো খুবই জনপ্রিয়। আপনি এই সাইট গুলোতে ওয়েব ডিজাইন,, ওয়েব ডেভোলপমেন্ট,,লগো ডিজাইন,, গ্রাফিক্স ডিজাইন,, ভিডিও ও ছবি এডিটিং,,,, আর্টিকেল লেখা,,রি রাইটিং,,ট্রান্সলেট সহ আরো অসংখ্য কাজ করতে পারবেন।
ফ্রিল্যান্সিং এ টাকা তুলবো কিভাবে? (How to withdraw freelancing money?)
অনেকের মনে প্রশ্ন থাকতে পারে যে সকল সাইট গুলো তো বিদেশি সাইট তাহলে আমরা টাকা তুলবো কিভাবে?
আসলে আমাদের বাংলাদেশিদের জন্য এসব সাইট থেকে টাকা তোলা একটু কষ্টসাধ্য কারণ বাংলাদেশে পেপাল সাপোর্ট করে না। তবে খুশির সংবাদ হলো যে আপনি মার্কেট প্লেস গুলো থেকে পেওনারে টাকা নিতে পারবেন এবং পেওনার থেকে সরাসরি বিকাশে টাকা আনতে পারবেন।
আমাদের শেষ কথাঃ
সবশেষে একটা কথাই বলবো ফ্রিল্যান্সিং করতে হতে আপনাকে প্রথমে কোনো একটি কাজের উপর দক্ষতা অর্জন করে নিতে হবে। আপনাকে অবশ্যই ইংরেজিতে ভালো হতে হবে। ভালো হতে হবে এর মানে আমি বলিনি যে ভালো রেজাল্ট করতে হবে।
আপনাকে ইংরেজিতে কথা বলতে পারা শিখতে হবে তাহলেই আপনি সহজেই ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবেন। প্রিয় ভিজিটর আজ আমরা কথা বললাম ফ্রিল্যান্সিং কি? কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শিখবো? ইত্যাদি বিষয় নিয়ে। আশা করি আপনি আমার লেখাটি পড়ে অনেক কিছু শিখতে পেরেছেন।